Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মধুবৃক্ষ খেজুর গাছ

খেজুর পরিবেশবান্ধব, স্থানসাশ্রয়ী একটি বৃক্ষ প্রজাতি। এ প্রজাতি দুর্যোগ প্রতিরোধী বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে।  খেজুর রস ও গুড় বিক্রি করে খামারির আর্থিক লাভ ও স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টান্ত বেশ সুপ্রাচীন। গ্রামীণ অর্থনীতি এবং  মৌসুমি কর্মসংস্থানে খেজুর গাছের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে শীতকালে বাংলাদেশের সর্বত্রই খেজুর রস, খেজুর গুড় দারিদ্র্য বিমোচনসহ বাঙালি সাংস্কৃতিতে রসঘন আমেজ লক্ষ করা যায়।
১. বৃক্ষ পরিবেশ প্রকৃতি : বাংলাদেশের মাটি ও কোমল প্রকৃতি খেজুর গাছ বেড়ে ওঠার জন্য বেশ উপযোগী।  রাস্তা, বাঁধ, পুকুর পাড়, খেতের আইল এবং আবাদি জমিতে এ বৃক্ষ বেশ ভালো জন্মে। তবে নদীর তীর, আংশিক লবণাক্ত এলাকা, বরেন্দ্র এলাকাসহ চরাঞ্চলেও জন্মে। বাংলাদেশের সব জেলা বিশেষ করে বৃহত্তর যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও নাটোর অঞ্চলে খেজুর গাছ বিজ্ঞানভিত্তিক চাষ করা হয়। যশোর ও ফরিদপুর দেশের সর্বাধিক খেজুর রস ও খেজুর গুড় উৎপন্ন অঞ্চল।
২. বৈজ্ঞানিক পরিচয় ও বিস্তৃৃতি : খেজুর বৃক্ষ একবীজপত্রী আবৃতবীজী উদ্ভিদ। ইংরেজি নাম
Wild Date Palm, Silver Date Palm, Indian Wild Palm আঞ্চলিক নাম খাজুর, খেজুর ও খাইজুর। উদ্ভিদ তাত্ত্বিক পরিচয়Phoenix sylvestris (Roxb.) এবং অ্যারাসি (Arecaceae) বা তালগোত্রের সদস্য। এ পরিবারের একটি গণ phoenix । এই গণের অন্য কয়েকটি চেনা গাছ খুদি খেজুর (Phoenix acaulis) ও হেতাল (Phoenix paludosa) ।
৩. খেজুর বৃক্ষস্বরূপ : শাখা-প্রশাখাবিহীন একক কা-যুক্ত ব্যতিক্রমধর্মী খেজুর গাছ। কাণ্ডটি সরল ও গোলাকার। একটি কাণ্ডই একাকি বেড়ে ওঠে এমন দৃশ্য বৃক্ষের ক্ষেত্রে খুব কম দেখা যায়। গাছের ট্রাংক বেশ মজবুত ও গোলগাল। কা-ের শীর্ষভাগ যা সদা পত্র শোভিত লাবনি মাথি বেশ দৃষ্টিনন্দন। রস আহরণের জন্য খেজুর গাছ বছরে ন্যূনতম একবার কাটা হয় এবং গোলগাল রাখা প্রয়োজন হয়। শীত ঋতুতে উদ্ভিদ জগতে এ নেমে আসে এক প্রাণহীন রসহীন বিবর্ণতার ছায়া তখন খেজুর গাছ রসের বারতা নিয়ে আসে। ফাগুনে প্রকৃতিতে খেজুর ফুল ফোটে। প্রকৃতির দান এর ফুল বিন্যাস যা মানুষকে আকৃষ্ট করে। কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতঋতুতে খেজুুরমাথিতে মুচি (পুষ্পমঞ্জরি) আসে। খেজুর ফুল ভিন্নবাসী, পুষ্পমঞ্জরি দেখে পুরুষ ও স্ত্রী গাছ চিহ্নিত করা যায়। শুধু স্ত্রী গাছে ফুল ও ফল ধরে পুং গাছে নয়। পুং পুষ্পমঞ্জরি খাটো, স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরি লম্বা ও ফুলের বর্ণ সাদা। খেজুর ফুল শক্ত মোচা থেকে বের হয়।  মোচা থেকে ফুল ফোটা এক অপার মহিমা, মনে হয় কোথা থেকে কোন ফুলপরি কণ্টাকীর্ণ গাছের মাথিতে মন্ত্র দিয়ে ফুল ফুটিয়েছে। খেজুরের মুচিতে এক ধরনের সাদা উপাদান, যা পরাগরেণুর সুবাস।  
৪. বহু গুণে গুণী খেজুর বৃক্ষ : খেজুরের বহুল ব্যবহার নিয়ে বর্ণনার শেষ নেই। রস দিয়ে নানা রকম পিঠা, পায়েস, গুড়, কুটির শিল্প, আয় ও কর্মসংস্থান হয়। সার্বিক বিবেচনায় খেজুর সমধিক গুরুত্ববহ একটি প্রজাতি।
খেজুর ফলের পুষ্টি উপাদান :  এই উদ্ভিদ মানবদেহের জন্য উপকারী বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান সমৃদ্ধ। খেজুর ফল ফাইবার ও ভিটামিন সমৃদ্ধ। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনা  খেজুর ফলের মধ্যে ১৮.০ গ্রাম জলীয় অংশ, মোট খনিজ পদার্থ ১.৭ গ্রাম, ৩.৯ গ্রাম আঁশ, ৩২৪ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ২.২ গ্রাম আমিষ, ০.৬ গ্রাম চর্বি, ৭৭.৫ গ্রাম শর্করা, ৬৩ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ৭.৩ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ এবং অল্প পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকে। প্রচলিত খাদ্য হিসেবে খেজুর রস বেশ সস্তা, পুষ্টিকর এবং উপাদেয়। খেজুর রসে অ্যাসপারটিক এসিড, নাইট্রিক এসিড এবং থায়ামিন বিদ্যমান।
খেজুর রস : শীত ঋতু এলেই গ্রামীণ সংস্কৃতিতে খেজুর রসের কথা মনে পড়ে। ফোঁটা ফোঁটা সঞ্চিত রস নির্গত হবে চোং দিয়ে। হাঁড়িতে জমে রসের ফোঁটা। এভাবে একটি গাছ দৈনিক গড়ে ৫-৬ লিটার রস দিয়ে থাক। কথিত আছে ‘খালি কলসি রেখে দিলে ভরে যায় রসে, সেই রসে দিয়ে জ্বাল মন ভরে সুবাসে’। আবার গাভীর সাথে তুলনায় বলা হয় ‘মাইট্যা গোয়াল কাঠের গাই-বাছুর ছাড়া দুধ পাই’। কাকডাকা ভোরে খেজুরের রস, মন মাতানো ঘ্রাণ শহরে বিরল। শীতের সাকালে খেজুর রস, মিষ্টি রোদ, কৃষক-কৃষাণির হাসি দারুণ প্রাণশক্তি। কবির ভাষায়, ‘এমন শীতলমিষ্টি কোথা আছে নীর? পান মাত্র তৃষিতের জুড়ায় শরীর’। তাই এ গাছকে অনেকে শখের বসে ‘মধুবৃক্ষ’ বলে থাকে।
খেজুর রসের পায়েশ :  খেজুর রস দিয়ে  তৈরি নানা রকমের পায়েশ, ক্ষির খেতে খুবই মজা। খেজুরের রস ও পিঠার সাস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। রস দিয়ে হরেক রকম পিঠার ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। খেজুর পিঠা ও রসের নানা রেসিপি শিরনি-পায়েস, ঘনরসে চিতৈ পিঠা, খেজুর গুড়-নারকেল মিশ্রণে বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
খেজুর রস থেকে গুড় : খেজুরের গুড় তৈরি করতে হলে এক ধরনের বিশেষ জ্ঞান থাকা চাই। খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করা একটি শিল্প।  রসের সাথে জ্বাল দেয়ার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। খেজুরের ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়,  ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়, বেশ সুস্বাদু ও সুপরিচিত। গাছে নলি দেয়ার প্রথম দিকের রস থেকে তৈরি গুড়কে নলেন গুড় বলে। পাটালি গুড়ের কদর এখনও বিদ্যমান। গুড় বিক্রির অর্থনৈতিক উপযোগিতা রয়েছে। পরিকল্পিত উপায়ে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে খেজুর গুড় রপ্তানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। পাটালি গুড় ও কোচড় ভরা মুড়ি প্রচলিত ও পরিচিত দৃশ্য, খেতে ভারি মজা। দুপুরে খেজুরের ভিড় গুড় আজকালের প্রজন্মের কাছে অচেনা এ মধুর স্মৃতি। খেজুরের গুড়ের চিনি সুমিষ্ট ও সুস্বাদু। খেজুরের গুড় থেকে তৈরি বাদামি-চিনির স্বাদ ও ঘ্রাণ বেশ স¦াতন্ত্র্যম-িত।
খেজুর বৃক্ষ ও কুটির শিল্প : কুটির শিল্পে খেজুরের পাতার ব্যাপক ব্যবহার ও কদর রয়েছে। খেজুর পাতা দ্বারা তৈরি করা রকমারি হাত পাখা, লছমি, ঝাড়–, ঝুড়ি, থলে, ছিকা ও নানা রকম খেলনা এখনও অতি সমাদৃত। খেজুর পাতার পাটির কদর ঘরে ঘরে। খেজুর পাতা দিয়ে নকশি পিঠা করা হয়। কুমোড়দের শীত মৌসুমে খেজুরের রস ধারণ করার হাঁড়ি তৈরির হিড়িক বাড়ায়।
খেজুর বৃক্ষ ও ভেষজ গুণাগুণ : সর্দি-কাশি নিরাময়ে খেজুর ফল উপাদেয়। খেজুরের পাতা রোগ নিরাময়ে ব্যবহার হয়ে থাকে। হৃদরোগ, জ্বর ও উদরের সমস্যা সমাধানে বেশ কার্যকর। গাছের শিকড় দাঁত ও মাড়ির প্রদাহ নিবারণে ব্যবহৃত হয়। রস মুখে রুচি আনে।
খেজুর বৃক্ষ ও জ্বালানি কাঠ :  খেজুর গাছ গ্রামীণ পরিবারের জ্বালানি দেয়। গৃহের নানা কাজে যেমন তক্তা, আড়া, খুঁটি তৈরি ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়। খেজুর কাঠ আঁশযুক্ত বলে এর দাহ্য ক্ষমতা অনেক বেশি। তাই গ্রামগঞ্জে খেজুর লাকড়ির সমাদর রয়েছে।
খেজুর বৃক্ষ ও উপজাতি সম্প্রদায় : খেজুর রস বাংলাদেশের উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রিয় পানীয়, বাড়তি শক্তির জোগান দেয়। শীতকাল তাদের কাছে বেশ স্মৃতিঘন। নতুন চাল আর গাঁজনকৃত খেজুর রস বিশেষ এক ধরনের আনন্দের আয়োজন, মানসিক তৃপ্তি। খেজুর গাছ খরা সহ্য করে বিধায় বরেন্দ্র অঞ্চলে খেজুর গাছের চাষ প্রচলন বেশ লক্ষণীয়।  
খেজুর বৃক্ষ ও গাছি সম্প্রদায় : ঠিলে ধুয়ে দে বউ গাছ কাটিতে যাবো, এই হলো খেজুর বৃক্ষকে কেন্দ্র করে তৈরি গাছি সম্প্রদায়ের বুলি। তাদের শিউলিও বলা হয়। এরা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। তাই শীতকালে গাছিদের কদর বেড়ে যায়, তারা দিনভর মহাব্যস্ত থাকেন। গাছিরা খেজুর গাছ তোলা-চাছার জন্য দা, চোং বা নলি, কাঠি, দড়ি, ভাঁড় ইত্যাদি  জোগাড় করার জন্য ব্যস্ত থাকেন। শীতকালে গাছিদের কর্মসংস্থান হয়। একজন গাছি দৈনিক ৫০টি গাছ কাটতে পারেন।  
খেজুর রস ও সামাজিক সম্পর্ক : এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে বেড়াতে গেলেও সাথে রস বা গুড় নিয়ে যেতে দেখা যায়। খেজুরের মুচিতে এক ধরনের সাদা পাউডার জাতীয় পদার্থ থাকে, যা মুখে মাখে, শিশুরা নানা খেলায় মেতে ওঠে।
৫. খেজুর কবিতা ও প্রবচনের ফল : বৃক্ষ প্রেমিক জীবনানন্দের ভাষায় সহসাই মূর্ত হয়েছে, বসেছে বালিকা খর্জ্জুরছায়ে নীল দরিয়ার কূলে। বাংলার রূপ কবিতায় সফিনাজ নূরুন্নাহারের ভাষায় মায়ের হাতের রসের পিঠা, মধুর মতো খেজুর মিঠা। তাই মনে পড়ে মায়ের কথা, মনে পড়ে মামা বাড়ি বেড়ানোর স্মৃতিকথা। আবার খেজুর গাছ নিয়ে নানা ধরনের প্রবচন, কবিতা গাঁথা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একটি খেজুর গাছ পাইয়া, লোভে কাটে বাঙালে আগা থুইয়া গোড়া কাটে রস নাহি মিলে। ও তার আগডালেতে থাকে রস রসিক বিনে কে জানে। নিত্যনতুন বেরোয় রস খেলে তা ফুরায় না, প্রেমের গাছের রসের হাঁড়ি পাতল যে জনা। সাধারণ গিরস্থ চাষা জ্বাল দেতে না পায় দিশা, হাইলাদের পাইলে তারে করে মিঠাই ম-া খানা। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের কথামালা, অলি-গাঁও বলি-গাঁও জলী ধান চষে, করে গুড় পাটালি খাজুরের রসে। মামুয়ে পাড়ৈন চিরল পাতা মামীয়ে রান্ধেন ভাত, কান্দিও না গো সোনামামী মামু তোমার বাপ। খেজুর গাছ নিয়ে ঘুমপাড়ানি ছড়া, ছুট ছুট (ছোট) খাজুর গাছ, এই নিয়ে খেজুরার বার দ্যাশ  (দেশ), এই খাজুর পাকিব, খেজুরার মা কাটিব, ও রসুন খালা গো, খেজুরার মায়েক বুজাও (বোঝাও) গো না কাটে না যেন। রাজশাহী অঞ্চলের লোকজ কথা, আমি ভাই একলা খেজুর গাছের বাকলা। খেজুর গাছ নড়ে চড়ে তীর ধনুকে বাড়ি পড়ে।
লোকজ জ্ঞান ও অপ্রচলিত ব্যবহার : কাঁচা খেজুরের বীজ পানের উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গ্রামে নারীরা অপরিপক্ব খেজুর বিচি পানের সাথে সুপারির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে।  খেজুরের আঁটি দিয়ে শৈশবের গর্তখেলার কথা আজও মনে পড়ে। খেজুরতলায় ঝরে পড়া পাকা খেজুর কুড়াতে গিয়েছি শৈশবে কত গদ গদ। খেজুর কাঁটা বন্যপ্রাণীর হাত থেকে ফসল রক্ষায় ব্যবহৃত হয়। নতুন বেয়াইর সাথে খেজুর কাঁটার ব্যবহার সম্পর্কিত ছড়া বেশ মজার হাসি তামাশার খোরাক দিত। বেয়াইরে বসতে দেবো কি? খেজুর কাঁটার মরা বুনাইছি, বেয়াইর বসতে লজ্জা কি? অমন মরায় বেয়াই বসেনি? খেজুরের মাথি খাওয়া একটি গ্রামীণ সংস্কৃতি, নরম ও কোমল সুমিষ্ট খেজুর মাথি পুষ্টিজ্ঞান।
খেজুর ও সেরা স্থান : খেজুর গাছকে কেন্দ্র করে অনেক নান্দনিক নাম শহর-বন্দরে প্রচলিত যেমন খেজুরতলা, খেজুরবাগান, খেজুুরবাড়িয়া, শিবচরের খাজুর গ্রাম। ঢাকার খেজুরবাগান একটি প্রতিষ্ঠিত নাম।
খেজুর ও পাখির খাদ্যাবাস : শীতের সময় খেজুর গাছে পাখির কিচিরমিচির শব্দে প্রকৃতি প্রাণ পায়। খেজুর গাছ পাখির প্রিয় আবাস। পাখিরা এখানে বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে ও নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে করে। খেজুর গাছে বাবুই ও চড়–ই বাসা বানায়, বাচ্চা তুলে।  কাঠঠোকরা, ঘুঘু ও চড়–ই খেজুর গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়, সাদা গলা মুনিয়া খেজুর গাছের মাথায় বাসা করে। শালিক, ঘুঘু, কাক, কোকিল, ময়না, মৌটুসি নরম ফল খায়।
খেজুর গাছ কৃষি বন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি : সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এ গাছ রেললাইন ও বসতবাড়ির ফটকে বেশ দৃষ্টিনন্দন। বরেন্দ্র অঞ্চলে খেজুর গাছ বেশ লক্ষণীয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। গ্রাম বাংলার মেঠো পথের দুইপাশে তাকালে চোখে পড়বে সারি সারি খেজুর গাছ। রাস্তার দুই ধারে, আবাদি জমিতে, ক্ষেতের আইলে সারিবদ্ধভাবে খেজুর গাছ জন্মেœ যা কৃষি বন বলে পরিচিত। দেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষি জমিতে বাণিজ্যিক খেজুর গাছ আবাদ একটি উত্তম পেশা বলে প্রমাণিত হয়েছে। মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহীতে কৃষি জমিতে খেজুর গাছ সফলতার দ্বার উন্মুক্ত করছে। এ গাছের সাথে সখ্য রয়েছে এমন সবজি প্রজাতি গাছআলু, লাউ, ধুন্দুল, লালশাক, সরিষা, বেগুন ইত্যাদি। একটি খেজুর গাছ ১০-১৫ বছরে ফল দেয়। প্রাকৃতিক অথবা চারা বা বীজ বপনের মাধ্যমে খেজুর গাছ জন্মে। বীজ থেকে চারা উৎপন্ন হয় এবং ১০-১৫ দিনে বীজ অংকুরিত হয়। প্রতি কেজিতে ১৩০০-১৫০০টি বীজ পাওয়া যায়। রস আহরণের জন্য গাছ ব্যবস্থাপনা গোছ-গাছ রাখা প্রয়োজন হয়। তাই কথায় বলা হয় খেজুর বাড়ে কোপে। খেজুর গাছের পাতা ও মাথি মাঝে মধ্যে কেটে-ছেঁটে গাছের গোল-গাল গড়ন ও বৃদ্ধি নিশ্চিত করা হয়। গাছ বছরে ন্যূনতম একবার কাটা হয়, শোভিত ও বেশ দৃষ্টিনন্দন রূপ দেয়া হয়।
৬.  উৎপাদন, বাজার ও কর্মসংস্থান : প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১২-২০১৩ অর্থবছরের বাংলাদেশে ১২০০৬ হেক্টর জমিতে মোট ৮১৫৮৩ মে. টন খেজুর উৎপাদিত হয়েছে। খেজুর উৎপাদনের শীর্ষ জেলাগুলো হলোÑ যশোর, ফরিদপুর, রাজশাহী ও নাটোর। প্রচলিত খাদ্য হিসেবে খেজুর রস বেশ সস্তা ও পুষ্টিকর। একটি গাছ দৈনিক গড়ে ৫-৬ লিটার রস দেয়। একটি গাছ থেকে প্রতি মৌসুমে গড়ে ২৫-৩০ কেজি গুড় তৈরি হয়। প্রতি কেজি গুড়ের মূল্য ৫০-৬০ টাকা। ২০০  খেজুর গাছ আছে এমন পরিবার পুরো বছরের সংসারের ব্যয়ভার বহন করতে পারে। পরিকল্পনা অনুযায়ী একবিঘা জমিতে প্রায় ১ থেকে ১৫০ গাছ রোপণ করা সম্ভব। ১টি প্রতিবেদনে দেখা যায় বাঘা উপজেলায় চাষিরা প্রতি বছর ৮-১০ কোটি টাকা আয় করেন খেজুরের রস ও গুড় বিক্রি করে। খেজুর ফল বিক্রি করেও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়।
খেজুর গুড়ের বাজার : শীত মৌসুমে গুড় তৈরি বেশ বড় পেশা। সারা দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গুড় ব্যবসায়ী গুড় বিপণন ও পরিবহনের সাথে যুক্ত থাকে। এ সময় গুড় বিপণন নিয়ে রব-রব পরিস্থিতি তৈরি হয়। গ্রামীণ হাটবাজারে প্রান্তিক মানুষ নগদ কিছু অর্থ কামিয়ে নেয়। বাংলাদেশে যশোর ও ফরিদপুর অঞ্চলে সর্বাধিক খেজুর রস ও গুড় উৎপন্ন হয়। বৃহত্তর যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী অঞ্চল গুড় ও পাটালি করা হয়। বেনাপোল-শার্শা খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত। মাদারীপুরেও বৃহৎ বাজার বসে। কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে বেশ রস উৎপন্ন হয়।
আরবের খেজুর : আরবের প্রধান ফল খেজুর। এ বৃক্ষ মহিমা নিয়ে সূরা আন্’আ-ম্, আয়াত-৯৯-১০০ নাজিল হয়েছে। যার অর্থÑ ‘এবং তিনি খেজুরের মোচা হতে ফলের থোকা থোকা বানাইয়াছেন, যাহা বোঝার ভরে নুইয়া পড়ে। এই গাছগুলো যখন ফলধারণ করে তখন উহাদের ফল বাহির হওয়া ও উহার পাকিয়া যাওয়ার আবস্থাটা একটু সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকাইয়া দেখিও। এই সব জিনিসের সুস্পষ্ট নিদর্শন সমূহ নিহীত রহিয়াছে তাহাদের জন্য যাহারা ঈমান আনে’। তাই আরবি খেজুরের প্রতি আমাদের দুর্বলতা প্রবল।
তবে আমাদের দেশের খেজুর এবং আরবের খেজুর ফলের মধ্যে বেশ তারতম্য রয়েছে। আমাদের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর আর সৌদি আরবের খেজুর ফল উৎপাদননির্ভর। তাই আমাদের দেশে আরবি খেজুর তথা বেহেশতি ফল চাষের কথা বলা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে  মোতালেব মিয়ার সৌদি খেজুর চাষের সাফল্যের কথা বলা যায়। তিনি সৌদি খেজুর চাষে একটা অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করেছেন কঠিন সাধনা ও পরিশ্রমের বিনিময়ে। দেশবাসীর জন্য মোতালেব মিয়া তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন।
৭. খেজুুর ও হারানো সংস্কৃতি : কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ মাস রসের মাস। রস আহরণে গাছ তৈরি করার ধুম পড়ে এসময়। গাছিদের গ্রামীণ জনপদে এখন কম দেখা যায়, পেশা ছাড়ছেন অনেক গাছি সম্প্রদায়। খেজুর রস বিক্রির চিত্র এখন আর দেখা যায় না। গাছিদের স্বার্থ ও আগ্রহ ধরে রাখা দরকার। এই উদ্ভিদের উৎকর্ষ সাধন এবং সংরক্ষণের জন্য নানা ধরনের  মৌলিক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

 

উপসংহার :  বৈরী জলবায়ু ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা পরিবর্তনের ফলে এসব প্রজাতির ওপর প্রভাব পড়ছে। ভাটির দেশে এ উদ্ভিদ প্রজাতি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।  তবে এই উদ্ভিদ অত্যধিক লবণ পরিবেশে ও দীর্ঘ খরা পরিবেশে আশানুরূপ রস দিতে পারে না। নদীর পাড়, রাস্তার প্রান্তে প্রজাতি দেখা যায় না। বসতবাড়িতে খেজুর গাছের আধিক্য ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে আশার কথা, বন বিভাগ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খেজুর গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে, এই উদ্ভিদের উৎকর্ষ সাধন এবং সংরক্ষণের জন্য নানা ধরনের মৌলিক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। বেশি রস দেয় এ রকম প্রজাতি শনাক্তকরণ ও তা কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা দরকার। বারি জার্মপ্লাজম সেন্টার এ বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। নার্সারিতে  খেজুর চারা উৎপাদন অত্যাবশ্যকীয় বলে মনে করি। দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠিত নার্সারিতে খেজুর চারা উৎপাদন করে চাষ বৃদ্ধি করা যায়। বাঁধ, গ্রামীণ বন, পাকা সড়ক, রেললাইনের ধারে, সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালতের ধারে খেজুর চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। নান্দনিক গাছের সমন্বয়ে ব্যাণিজ্যিকভিত্তিক উদ্ভিদ উদ্যান তৈরি হতে পারে, যা মানুষকে আকর্ষণ করবে। পরিকল্পিত উপায়ে পতিত ও প্রান্তিক জমিতে গাছ রোপণ করলে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে গুড় রপ্তানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

ড. এস এম আতিকুল্লাহ*
*এগ্রিকালচার স্পেশালিস্ট, জাতীয় ভূমি জোনিং প্রকল্প, ৩/১ এ নীলক্ষেত, বাবুপুরা, ঢাকা-১২০৫, মোবাইল : ০১৭১২৮৮৯৯২৭

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon